মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে দরিদ্র কৃষক পরিবারের দুই ভাইবোন বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ বছর ঘরবন্দি রয়েছেন। চেহারা অবস্থা এমন হয়েছে বাইরের মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। আর সূর্যের আলো তারা সহ্য করতে পারে না। এমনই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন হতদরিদ্র কৃষক বাবা ফকরুল ইসলাম।
সদর ইউনিয়নের উত্তর তিলকপুর গ্রামের মো. ফকরুল ইসলামের ছেলে সিরাজুছ ছালেকিন (১৮) ও মেয়ে আবেদা আক্তার রিমা (১৫)। তারা জন্মের ৩ বছর পর থেকে ভাইবোন উভয়েই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়।
আক্রান্তের পর চোখের সামনে ছেলেমেয়ের এমন অবস্থা দেখে বাবা তাদের গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। অন্ধবিশ্বাসের কারণে ক্রমাগত রোগ বাড়তে থাকে।
সিরাজুছ ছালেকিনের মুখমণ্ডল ও শরীরে রোগটি ক্রমাগত বেড়ে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। আর আবেদা আক্তার রিমার রোগটিও বেড়ে গিয়ে মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এই অবস্থাতে ঘরের বাইরে বের হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। তাদের মধ্যে কেউই সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। ভাইবোন দীর্ঘ ১৫-১২ বছর ধরে তারা এই ভয়ংকর রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
আর্থিক অসচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে অসহায় ফকরুল ইসলাম কোনো সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না। ভালো কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারেননি। একদিকে রোগের যন্ত্রণা অন্যদিকে সংসারের অনটনে চিকিৎসার অভাবে যেন তারা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
জানা যায়, ৬ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুছ ও রিমা তৃতীয়। ৬ জনের মধ্যে দুজনই বিরল রোগে আক্রান্ত ৪ জন সুস্থ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের ফকরুল ইসলাম কৃষিকাজ করে ৮ জনের সংসার চালানো তার পক্ষে খুবই কষ্টকর। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পায়নি এই অসহায় পরিবার।
প্রথমে সিরাজুছের মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ও সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পরে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সে তরল জাতীয় খাদ্য ছাড়া কিছুই খেতে পারে না।
রিমার শরীরে ও মুখে প্রথমে কিছু সাদা সাদা দাগ ছিল। পরে তা পুরো মুখে ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক কালো আকার ধারণ করে। এখন সে আলোতে ঠিকমতো তাকাতে পারে না। তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা রোগটি শনাক্ত করতে পারেনি।
স্থানীয়দের পরার্মশে পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তাররা সঠিক রোগটি শনাক্ত করতে না পারায় এবং সুনির্দিষ্ট কিছু না বলায় রোগাক্রান্ত ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন বাবা ফকরুল ইসলাম।
এখন মা শিরী বেগম ও বড় ভাই শামসুল আরেফিন তাদের দেখাশোনা করেন।
কৃষক ফকরুল ইসলাম বলেন, ছেলেমেয়েদের চিকিৎসার প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক বাধা। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমতাবস্থায় নিজের চোখের সামনে ছেলেমেয়ের আর্তনাদ দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। আমি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ রোগের চিকিৎসার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছি।
কমলগঞ্জ ৫০ শয্যা হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডা.সৈয়দ শওকত আলী বলেন, এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। রোগীর চামড়ার কোষে মেলানিন না থাকায় সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মিতে কোষের DNA নষ্ট হয়ে যায়। ক্রমাগত অতিবেগুনী রশ্মির সম্মুখীন হলে DNA নষ্ট হয়ে ক্যানসার হতে পারে।
তিনি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন রোগটি xeroderna pigmenposam হতে পারে। এটি একটি বিরল ধরনের রোগ। ছেলে ও মেয়েটিকে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা পিজি হাসপাতালে পাঠানো যেতে পারে। অসহায় কৃষক ফকরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানদের চিকিৎসার জন্য আকুল আবেদন জানান। সচেতনরা মনে করছেন সরকার বা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এসে যদি এই অসহায় ভাইবোনের চিকিৎসার ভার নেন তাহলে হয়তো নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে রোগাক্রান্ত ছালেকিন ও রিমা।