Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
কলরেট কমাতে ৯ দফা প্রস্তাবনা

কলরেট কমাতে ৯ দফা প্রস্তাবনা

য়েস কলরেট বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনের সংগঠনটি ভয়েস কলরেট কমাতে ৯ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইইটিইউ) সহায়তায় বিটিআরসি ভয়েস কলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন রেট বেঁধে দেয়।

সেই সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি কস্ট মডেলিংও করেছিল। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট ২০১৮ হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রজ্ঞাপন জারী করে গ্রাহকদের ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হলো এখন থেকে ভয়েস কলরেটে অন নেট অফ নেট থাকছে না।

রেট হবে পূর্বের ফ্লোর রেট ২৫ পয়সার স্থলে ৪৫ পয়সা আর সর্বোচ্চ সিলিং রেট ২ টাকা থাকবে। এর মধ্যে অপারেটররা যার যার সুবিধা দিতে পারবে। কারণ একটি অপারেটরের ৯০ শতাংশ কল হচ্ছে অন নেটে। অন্য অপারেটরদের ৭০ শতাংশ।

আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন টেলিটকের ১০ শতাংশ। যুক্তি হিসাবে বলা হলো- অন নেট, অফ নেট এক হওয়াতে মনোপলি ভাঙ্গা যাবে।

মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, যুক্তি অত্যন্ত হাস্যকর। কারণ প্রথমত মনোপলি ভাঙ্গার কাজ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নয়, এজন্য আমাদের দেশে প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে, আছে আইনও। যদিও তা কাগজে কলমে।

দ্বিতীয়ত, গ্রাহকদের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে দিচ্ছেন কাকে? ওই অপারেটর বা অন্য কোন অপারেটরকে। এই ক্ষেত্রে গ্রাহকদের লাভ কোথায়? তৃতীয়ত, প্রজ্ঞাপনের ফাঁক ফোকর থাকায় গ্রাহকরা চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ল।

কারণ আপনি ২৫ পয়সার জায়গায় ৪৫ পয়সা করেছেন। আর সর্বোচ্চ ২ টাকা নিতে বলেছেন। তাহলে কেউ যদি ১.৮০ পয়সা বা সর্বোচ্চ ২ টাকায় নেয় তার জন্য তাকে কি দায়ী করা যায়?

দেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লক্ষ। গ্রামীণফোনের ৭ কোটি ২ লক্ষ, রবির ৪ কোটি ৫৩ লক্ষ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ, টেলিটকের ৩৭ লক্ষ।

বিটিআরসির হিসাব মতে গ্রামীণফোনের অন নেট কল হয় ৯০ শতাংশ, রবির ৭১ শতাংশ, বাংলালিংকের ৬৯ শতাংশ ও টেলিটকের ১০ শতাংশ।

অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাবও যদি ধরি তাহলে দেখা যায় বর্তমান রেটে অতিরিক্ত বিল আদায় করা হচ্ছে ৫০ শতাংশ। যার প্রমাণ রবির বর্তমান কলরেটের বিজ্ঞাপন। অন্যদিকে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিট নিচ্ছে ২ টাকা।

মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি বলছেন, গ্রামীণফোনের অতিরিক্ত আদায়ের হার ৭৫ শতাংশ। অফনেট বন্ধের কারণ গ্রাহকদের সুবিধা যতটা না দেয়া তার চেয়ে ছোট ও মাঝারি অপারেটরদের দেওয়া।

অফনেটের কলের জন্য যে অপারেটরের নিকট কল যাবে তাকে প্রতি মিনিটের জন্য ১৮ পয়সা। আর আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) তাকে দিতে হবে ৪ পয়সা। মোট ২২ পয়সা। যেমন গ্রামীণফোন থেকে টেলিটক, রবি বা বাংলালিংক।

পূর্বে অফনেটের সর্বনিম্ন রেট ছিল ৬০ পয়সা। তার মানে ৬০ পয়সা থেকে ২২ পয়সা বাদ দিলেও অপারেটররা পেত ৩৮ পয়সা। এ হিসেবেও অপারেটরদের লাভ হতো। কমমূল্যে যদি ভালো সেবা দেবার কথা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলতো তাহলে পূর্বের হিসেবেও দিতে পারতো।

মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে যখন কস্ট মডেলিং করা হয়েছিল সেই সময় গ্রাহকের সংখ্যা ছিল বর্তমানের তুলনায় ২৫ শতাংশ এবং সেই সময় উৎপাদন খরচও অধিক ছিল এই কারণে।

বর্তমানে এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ফলে উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে এসেছে। এতো তথ্য উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও স্টেক হোল্ডারদের মতামত না নিয়ে কোন প্রকার কস্ট মডেলিং বা গণশুনানী না করে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিলের বোঝা চাপিয়ে দেয়ায় সংগঠনটি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, আপনারা দ্রুত বর্তমানে নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির কারণ পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাসহ জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।

দেশে বিপুল সংখ্যক সক্রিয় সিমের বিপরীতে হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। অর্থাৎ একজন গ্রাহক ২ বা অধিক সংখ্যক সিম ব্যবহার করে কেবলমাত্র অন নেট সুবিধা পাওয়ার জন্য।

এ সকল বিষয় বিচার বিবেচনা না করে শুধুমাত্র অপারেটরদের স্বার্থরক্ষার কারণেই এই কলরেট বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের মধ্যে ৫ শতাংশ উচ্চ বিত্ত, ১০ শতাংশ উচ্চ মধ্যবিত্ত, ২০ শতাংশ মধ্যবিত্ত, ৩০ শতাংশ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও ৩৫ শতাংশ নিম্ন বিত্ত ও হতদরিদ্র। এর মধ্যে শ্রমিক, রিকশাচালক ও ভিক্ষুকও রয়েছে।

মহিউদ্দীন আহমেদের ভাষায়, উন্নত বিশ্বে বর্তমানে ভয়েস কলের পরিমাণ কমে গিয়েছে। আমাদের দেশেও ভাইবার, হোয়াটসআপ, ইমু ব্যবহার করে প্রায় ২ শতাংশ। আর অবৈধপথে ব্যবহারকারীর সংখ্যাও প্রায় ৩ শতাংশ।

অতএব ৯৫ ভাগ গ্রাহকই সরাসরি ভয়েস কলের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান কলরেট বৃদ্ধির ফলে গড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা গ্রাহকের খরচ বৃদ্ধি হয়েছে। এতে করে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা গ্রাহকদের ব্যয় হতে পারে।

মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন বলছে, আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ থাকলেও সেখানে শুধু এই খাতকে সেবা খাত হিসাবে দেখানো হয়েছে। এর ফলেও প্রায় ১৬ হাজার অভিযোগ ভোক্তা অধিদপ্তরে জমা হয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানেও অপারেটররা মহামান্য হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজে হস্তক্ষেপ হরণ করেছে।

মহিউদ্দীন বলেন, আমরা মনে করি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টার এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের গ্রাহকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একটি আলাদা আইন ও কমিশন গঠন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

তা না হলে ভবিষ্যতে সড়কের মতো এ খাতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছে সংগঠনটি।

ভয়েস কলরেট কমাতে ৯ দফা প্রস্তাবনা ও দাবী জানিয়েছে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন-

১। অফ নেট, অন নেট প্রথা বাতিল করে সরাসরি একক কল লাইন চালু করার দাবী রাখছি।

২। কলরেট পূর্বের ২৫ পয়সা বা তারও কম করা যায় কিনা তার জন্য গণশুনানী ও নতুন করে কস্ট মডেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে গ্রাহক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এটি আলাদা আইন ও কমিশন তৈরি করতে হবে।

৪। কলরেটের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দ্রুত ফেরৎ দিতে হবে।

৫। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আগামী ১ মাসের মধ্যে ঠিক করতে হবে।

৬। চলতি বাজেটে পাশ হওয়া ইন্টারনেটের উপর ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা কেন বাস্তবায়ন হলো না তার ব্যাখ্যাসহ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭। প্রমোশনাল ম্যাসেজ যত্রতত্র পাঠানোর বন্ধের নির্দেশ কেন বাস্তবায়ন করছে না অপারেটররা তার ব্যাখ্যা ও এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৮। এমএনপি চালুর পূর্বে অপারেটর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ৩০ টাকা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ভ্যাট কে প্রদান করবে এবং কীভাবে এ অর্থ আদায় হবে তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।

৯। ফোরজি-চালুর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ২০ এমবিপিএস আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ খান, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম বুলু।

এছাড়া অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবির চৌধুরী তন্ময়, পোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর কাজী আমান উল্যাহ মাহফুজ, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন’র সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ শামছুল মনির, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, পেশাজীবি ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
Scroll To Top