জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর জোট গড়ার মৌসুমে কোনো জোটে নেই আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তমের দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। বছরখানেক ড. কামাল হোসেন আহৃত বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় কাদের সিদ্দিকীকে দেখা গেলেও কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সর্বশেষ গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শামিল হননি কাদের সিদ্দিকী। জোট প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, ‘একাত্তর সালের মতো’ একটি ঐক্য প্রয়োজন।
পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ১২ হাজার লোক কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিবাদ সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে শতাধিক তরুণ প্রাণ হারিয়েছিল, নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল শত শত প্রতিবাদী। সে সময়ের প্রতিবাদী সহযোদ্ধাদের ডেকেছেন কাদের সিদ্দিকী। আগামী ২৮ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তাঁদের নিয়ে একটি সভা করবেন তিনি। সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন, কাদের সিদ্দিকী আবার ‘আওয়ামী ঘরানার বলয়ে’ ফিরছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের দাবি, কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে ফিরতে পারেন, আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটেও আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে আরো কয়েকজন আলোচিত মুক্তিযোদ্ধাও থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী যাদের নিয়ে যে সভা ডেকেছেন সেটা বঙ্গবন্ধুকন্যার আবেগের সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি তিনি হয়তো সেভাবেই মূল্যায়ন করবেন।’
কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম অবশ্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’ আগামী দিনে রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে অবস্থান সম্পর্কে দেশাবসীকে জানাব।’ ড. কামাল হোসেনের নতুন জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে, তবে একটি অর্থবহ ঐক্যের দরকার ছিল। প্রয়োজন একাত্তর সালের মতো একটি ঐক্য।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বা সংশ্লিষ্ট কোনো জোটে শামিল হচ্ছে না তা বোঝা যায় দলের একাধিক নেতার কথায়। নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে তাঁরা বলেন, তাঁদের আশা ছিল ড. কামাল হোসেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চালিত দুই জোটের সমদূরত্বে থেকে একটি রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করবেন। তাঁরাও সেখানে থাকবেন; কিন্তু তা হয়নি। ড. কামাল একটি জোটে ঢুকে পড়েছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক নেতা বলেন, ‘জোটের চেয়ে আমাদের লক্ষ্য ভোটের দিকে। আমরা সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন তো ঐক্য করেই ফেলেছেন। এখন আমরা কী করে সেখানে যাই! এ ছাড়া আমরা আশা করেছিলাম, তিনি কোনো জোটে না ঢুকে পৃথক মোর্চা করবেন; তিনি তা করেননি। আমরা সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাবেন নাকি নিজেরা কোনো জোট গড়বেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামীতে কিছু ঘটলে নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন। অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকীর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব ইতিবাচক।’ টাঙ্গাইলের রাজনীতির হিসাব কষে ওই নেতা বলেন, ‘টাঙ্গাইলে একসময় খান ও সিদ্দিকী দুটি প্রভাবশালী পরিবারই আওয়ামী লীগের ছিল। কাদের সিদ্দিকী বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রাধান্য পায় খান পরিবার। শামসুর রহমান খান শাহজাহানের মৃত্যুর পর তাঁর ভাতিজা আমানুর রহমান খান এমপি হন, তাঁর অন্য ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র হন। আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে আমানুর রহমান খান কারাগারে, পুরো খান পরিবার রাজনীতিতে কোণঠাসা। আওয়ামী লীগ হয়তো টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে দুটি পরিবারকেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী ঘরানায় ফিরলে টাঙ্গাইল সদর আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন তাঁর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী। অন্য ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গেই আছেন।’ আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরো বলেন, ‘বিএনপি জোট খেলতে শুরু করেছে, নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না। অপেক্ষা করুন অনেক কিছুই ঘটবে।’