টানা ভারিবর্ষণ ও উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট সব নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নদীর চরাঞ্চলে থৈ থৈ করছে পানি।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে নতুন ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সরকারি হিসাবে বলা হয়, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে জেলার ৪ উপজেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে প্লাবিত হয়েছে সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল।
এসব এলাকার অন্তত শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চারদিকে থৈ থৈ পানি আর পানি। মানুষ ছুটছে উঁচু জায়গার সন্ধানে। সরকারিভাবে ১৮১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন তাদের গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। তবে যেভাবে পানি বৃদ্ধি হচ্ছে তাতে আশ্রয় কেন্দ্রেও থাকা যাবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
বুধবার বিকালে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যা এলাকায় বাঁধের অন্তত ৩০ ফুট এলাকা ধসে যায়। এতে ভরতখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, খামার পবনতাইড়, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বেড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ী, গুয়াবাডী, কালুরপাড়া, কানাইপাড়া, কুমারপাড়া এবং জুমারবাড়ী ইউনিয়নের কাঠুর, থৈকরের পাড়া ও পূর্ব আমদির পাড়াসহ প্রায় ১৫টি মৌজা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার কমপক্ষে সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ জমির পাট, কাউন, তিল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিতরা।
সাঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের এবং গো-খাদ্যের সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধায় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।