বগুড়ায় কোটাবিরোধী জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের ককটেল হামলার প্রতিবাদে শহরের সাতমাথা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ মোকাবিলায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা টেম্পল রোডে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের পর দাহ্য পদার্থ ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। তারা পাশেই মুজিব মঞ্চ ভাঙচুর ও পাশে পুলিশ বক্স, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অস্থায়ী কার্যালয় ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা পোস্ট অফিস, জাসদ অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভাঙচুর করে। সেখানে ৪-৫টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে যায়। জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যক্তিগত দুটি কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর লুটপাট করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেল ও লাঠিপেটায় যমুনা টেলিভিশনের ব্যুরোপ্রধান মেহেরুল সুজন, দৈনিক করতোয়ার স্টাফ ফাটোগ্রাফার শফিকুল ইসলামসহ ৪-৫ জন সাংবাদিক আহত হন। তাদের তাড়া খেয়ে সাংবাদিক ও পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে সরে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আসার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে ওঠেন ও তারা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেন। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা হামলাকারীদের প্রতিহত করেনি। এতে জনগণের মাঝে নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জানান, পূর্ব কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে বগুড়া জিলা স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে বের হন। এছাড়া শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় আসেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ৪-৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ও জিলা স্কুলের ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। তখন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর পাল্টা হামলা চালালে তারা পালিয়ে যায়।
সোমবার ঢাকায় হতাহতের রিপোর্ট কেন পত্রিকা/টিভিতে প্রকাশ/প্রচার হয়নি এমন অজুহাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। তাদের ভাঙচুরের ছবি ভিডিও করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরোপ্রধান মেহেরুল সুজনের মাথায় লাঠির আঘাত করলে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। কয়েকজন পথচারীও আহত হয়েছেন।
এসব ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি।
বগুড়া সদর থানার এসআই রহিম উদ্দিন জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের হামলা প্রতিহত করার ব্যাপারে তাদের ওপর কোনো নির্দেশনা ছিল না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ খবর পাঠানোর সময় শহরের সাতমাথায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল।
অন্যদিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দুপুরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। শহরে ছিলিমপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠানের সামনে বেলা সোয়া ১১টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ব্যাপক যানজটে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শিক্ষার্থীরা ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। সোমবার মধ্যরাতেও শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান চত্বরে বিক্ষোভ করেন।
এছাড়া বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শত শত শিক্ষার্থী মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠান থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা সরকারি শাহ সুলতান কলেজ অতিক্রম করার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। তখন দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরকারি শাহ সুলতান কলেজের ভেতরে আত্মগোপন করেন।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বনানী এলাকায় শাপলা চত্বরে মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ চলাকালে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসেও তাদের সরিয়ে দিতে পারেননি। এ সময় আল মুমিন নামে এক ফাটোগ্রাফারের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
অপরদিকে কোটা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে বাধা ও ব্যানার কেড়ে নেয়। তখন দুপক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের বাধার মুখে মিছিল শেষ না করেই বাম নেতাকর্মীরা চলে যান।