দশম সংসদের নবম অধিবেশনে বুধবার সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেজাকে এ পর্যন্ত ৪টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো— নরসিংদীর একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সিগঞ্জের আবদুল মোমেন অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইকোনমিক জোন এবং মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন।’
শেখ হাসিনা জানান, বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিবেশের সুযোগ গ্রহণ করে এ পর্যন্ত একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, মেঘনা ইকোনমিক জোনে ৫৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ১৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ইউএস ডলারসহ সর্বমোট ২২০ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে প্রায় লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি ইপিজেড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ঈশ্বরদী ইপিজেডে নতুন ১২৮টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে। মংলায় ৭৪টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পস্থাপনে গ্যাস বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা-ঘাট সম্বলিত শিল্প প্লট প্রদান ও ঋণ সহায়তা করা হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পের সমুদয় টাকা বাংলাদেশের মানুষের অর্জিত অর্থ। কারো আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা এতে নেই। এর প্রতিটি রড, ইট, পাথর, সিমেন্ট জনগণের টাকায় কেনা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্নটি পূরণ হতে চলেছে।’
প্রকল্পটির শুরুতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠলেও তা প্রমাণ হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই প্রকল্পে জনগণের টাকার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার হয়েছে এবং হচ্ছে। যেকারণে এর বাস্তবায়নও অনেক বেগবান হচ্ছে।’
জনগণের আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের আনীত অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে কথিত দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক এক পর্যায়ে এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও নতুন নতুন শর্ত আরোপ করে দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করায় আমরা দেশ ও জনগণের স্বাথে তাদের ঋণ গ্রহণ না করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘দক্ষিণ বাংলার মানুষের সঙ্গে সারা দেশের মানুষের যোগাযোগ সহজ করা এবং বাংলাদেশকে আর্ন্তজাতিক সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার লক্ষ্যে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় হবে মোট ২৮ হাজার ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনক ভাবে এগিয়ে চলছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।’
একই প্রশ্নকর্তার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতি পাই পাই টাকা যথাযথ ভাবে জনগণের স্বার্থে খরচ হচ্ছে কি না, সেটা এমপিদের তদারকি করা প্রয়োজন। এমপিরা যদি প্রকল্পগুলোর ব্যয়িত অর্থের তদন্ত করেন এবং যথাযথ ভাবে কাজ হচ্ছে কি না দেখেন, তবে কোন সমস্যা হবে না। এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সবগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হয়েছে। কোন কাজই অর্থের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না।