এটা গণতান্ত্রিক দেশ না, বলে দিলেই হয়
২৪ ঘন্টা খবর : ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন কবরে’— এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন কবরে। নির্বাচন কমিশনেরও কবর হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’। তাহলে এখন এটা গণতান্ত্রিক দেশ না, বলে দিলেই হয়।’’ রাজধানীর কাকরাইলে শুক্রবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা দিবস উপলক্ষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এ মন্তব্য করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি রক্তপাত চাইনি। এ জন্য ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, আপনি ক্ষমতা ছাড়েন। লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা হবে, কিন্তু সেদিন আমার সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছিল। আজ কি দেখছি!’ জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে। নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিচার বিভাগ সব ধ্বংসের মুখে। আমরা এটা চাইনি। এটা কি গণতান্ত্রিক দেশ? গণতন্ত্র আজ নির্মূল হল। কবরে চলে গেল। এটা আমরা দেখতে চাইনি।’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমাকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু পারেনি। আমরা কারও কাছ থেকে সুবিচার পাইনি। ১৯৯৬ সালে আমরা ঐকমত্যের সরকারে ছিলাম। তারপর আমার মহাসচিবকে কেড়ে নেওয়া হল। দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হল। কিন্তু আমি নিঃশেষ হইনি।’দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারে আছি, কি পেলাম আমরা। সুবিচার আমরা কোথাও পাইনি। মঞ্জু হত্যা মামলা চলছে। অনন্তকালব্যাপী চলবে। আমার মৃত্যুর পরও চলবে। তাই এবার আমরা এককভাবে নির্বাচন করব। আর কাউকে আমাদের দরকার নেই।’ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারও কাছেই সুবিচার পাননি দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘কোথাও সুবিচার পাইনি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি একলা নির্বাচন করব। মানুষ পরিবর্তন চায়। মঞ্জু হত্যা মামলা চলছে। অনন্তকালব্যাপী চলবে। আমার মৃত্যুর পরও চলবে।’ এরশাদ মনে করেন, ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলেই কেবল তিনি সুবিচার পাবেন। আর ক্ষমতায় যাওয়াটা অসম্ভব কিছু না। কারণ মানুষ এখন নিশ্বাস নিতে পারছে না। এরশাদ এবং তাঁর দল জাপাকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ধ্বংস করতে চেয়েছিল—এমন অভিযোগ করে এরশাদ বলেন, ‘এখন বিএনপির অস্তিত্ব ধ্বংসের মুখে। নির্বাচনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতও কেউ নেই। সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ বলেন, ‘১৯৮৪ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি উপজেলা গঠন করেছিলেন। এতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব হয়েছে। অর্থনীতি সুদৃঢ় হয়েছে।’ এরশাদ বলেন, ‘আমাকে স্বৈরাচার বলা হয়। পৃথিবীর কোন স্বৈরাচার ক্ষমতা ছাড়ার পর পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছে। আমি কোনোদিন পরাজিত হইনি। আমি মানুষের কোনো ক্ষতি করি নাই। কাউকে খুন করি নাই। কাউকে বাড়ি ছাড়া করি নাই। তাই মানুষ আমাকে স্মরণ করবে।’ আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে সরকারের অতীতের সব অপকর্ম মানুষ ভুলে যাবে। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়। ক্ষমতায় থাকলে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করা যায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সরকারের জন্য অগ্নি পরীক্ষা। নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে সরকার পাস, আর নিরপেক্ষ না হলে সরকার ফেল করবে।’ তবে এরশাদের দল জাতীয় পার্টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি সমাবেশ থেকে। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, শেখ সিরাজুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ফখরুল ঈমাম, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, নুরুল ইসলাম নুরু, দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, যুগ্ম দফতর সম্পাদক আবু হাসান আহমেদ জুয়েল প্রমুখ।